[ad_1]
By Ujal Kumar Mookherjee & Sanjukta Bhattacharya
(This blog is the sixth in the series of blogs that JILS will publish in various vernacular languages as part of its initiative to mark the International Mother Language Day.)
ভারতে, প্রায় ২৮ কোটির মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য কাঠের বনসম্পদের উপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আদিবাসী উপজাতি। ভারতের বনায়ন ব্যবস্থার প্রাথমিক রূপ পাওয়া যায় ঔপনিবেশিক শাসনকালে। তবে, ঔপনিবেশিক বনায়নের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল সম্পদের অবক্ষয় রোধ করা যাতে উপনিবেশের শাসকের জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারেন। স্বাধীনতার পর কাঠের বন-পরিচালনা ব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তন ঘটেছে, তবে ঔপনিবেশিক যুগের ভারী ছাপ এখনও এই খাতে বিদ্যমান। এই প্রবন্ধটি এই বন-পরিচালনা ব্যবস্থার উৎপত্তি এবং এর বিকাশের, বিশেষতর এই ব্যবস্থা রূপায়ণ করতে যেসব আইন ও নীতির প্রণয়ন ঘটেছে, এর একটি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে। এই বিশ্লেষণটি বন-নির্ভর জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্ন এবং বন-পরিচালনার মূলস্রোতের সাথে তাদের বৈপরীত্যের প্রশ্নগুলিকে তুলে ধরে এবং বর্তমান আইন ও নীতির ক্ষেত্রে কীভাবে এই অধিকার ও বৈপরীত্যের প্রশ্নগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এর মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে।
ভারতের মাটিতে ঘাঁটি গাড়ার সাথে সাথেই ঔপনিবেশিক শক্তির নজর পরে ভারতের বিস্তীর্ণ অরণ্যগুলির দিকে। আঠেরো শতকের ইউরোপের গৃহযুদ্ধের (সেভেন ইয়ার্স ওয়ার ১৭৫৬-১৭৬৩) ফলে ব্রিটেনে যে কাঠের আকাল দেখা দিয়েছিল, তা নিরাময় করা ছিল অত্যন্ত জরুরী[1]। চতুর্থ ইঙ্গ- মহীশুর যুদ্ধে টিপু সুলতানের হার এবং শ্রীরঙ্গাপত্তম সন্ধির মাধ্যমে কান্নাড দখলের সাথে সাথেই ওয়েলেস্লি সাহেব ফ্রান্সিস বুকানন কে পাঠান ভারতের নব্য অধিকৃত অঞ্চলের একটি অর্থনৈতিক সমীক্ষা করতে। তাতেই সামনে আসে মালাবার উপকূলের কাষ্ঠসম্পদ সমৃদ্ধ জঙ্গলগুলির কথা[2]। বোম্বের জাহাজ তৈরির কারখানাগুলিতে কাঁচা মাল সরবরাহ করতে মালাবার উপকূলের জঙ্গলগুলি উপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের কতৃত্ব স্থাপন করে।
তবে এছাড়া ভারতের বাকি অরণ্যগুলীর বেশিরভাগই ছিল অনিয়ন্ত্রিত। তবে কোম্পানি থেকে ইংরেজ রাজতন্ত্রের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাথে সাথেই সারা দেশব্যাপী সমস্ত অরণ্যাঞ্চলগুলীকে একসাথে একই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অধীনে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই ব্যবস্থাপনার নাম দেওয়া হয় ‘scientific forestry’ (বৈজ্ঞানিক বনরক্ষন ব্যবস্থা)[3]। এই ব্যবস্থাপনাকে রুপায়িত করতে ব্রিটিশ শাসক একদিকে যেমন বনদফতর গঠন করে[4], অন্যদিকে একের পর এক নিয়ন্ত্রক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের সমস্ত বনাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ প্রকারন্তরে নিজেদের কুক্ষিগত করে[5]। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পরিসরের ভিত্তিতে তিনটি ভিন্ন শ্রেণিতে বনাঞ্চলগুলীকে বিভক্ত করা হয়। তা যথাক্রমেঃ রিজার্ভ বা সংরক্ষিত, প্রটেকটেড বা সুরক্ষিত এবং ভিলেজ ফরেস্ট[6]।
এই ব্যবস্থাপনায় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই বনে বসবাসকারী বা বননির্ভর উপজাতিগণ। এতদিন বনে তাদের যাতায়াত ছিল অবাধ। বনের অপ্রধান উৎপাদনগুলি ছিল তাদের জীবিকানির্বাহের মূল উপদান। বনসম্পদের উত্তরোত্তর ক্ষয়ের জন্য তাদেরকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করায় ইংরেজ শাসক। সম্রাজ্যবাদির লোলুপ দৃষ্টি, দেশের ভৌতপরিকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য জঙ্গল ধ্বংস এবং কাঠ চোরাচালানকারীদের দৌরাত্ম্য- সবই লঘু করে দিয়ে, হতদরিদ্র জনজাতিগুলোকে ‘অনুপ্রবেশকারীর’ (encroachers) তকমা দিয়ে তাদের বনে যাতায়াত কোথাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয় আবার কোথাও তার উপর নানা শর্ত জারি করা হয়। তাদের রীতিভুক্ত ‘অধিকার’ পরিণত হয় সরকারী দান খয়রাতিতে[7]।
বস্তুত যেই আইনগুলীর মাধ্যমে এই ব্যস্থাপনা বাস্তবায়িত করা হয়, তার মধ্যে মুখ্যঃ ইন্ডিয়ান ফরেস্ট একট, ১৯২৭, এখনো প্রচলীত আছে।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে এই ব্যবস্থাপনায় বিশেষ কিছু হেরফের হয়নি। নব্য স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশে কাষ্ঠ-সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বনসম্পদ সংরক্ষণের চেয়ে রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো পরিবর্ধন শ্রেয় হয়ে দাঁড়ায়[8]। একই সাথে বনে বসবাসকারী বা বননির্ভর উপজাতিগুলীর (Forest Dwellers and Forest Dependent Communities) অধিকারের প্রশ্নগুলি হয়ে ওঠে গৌণ। জোর দেওয়া হয় বনসম্পদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর দিকে[9]।
১৯৭২ সালে স্টকহোম সম্মেলনে ভারতের অংশগ্রহণ এবং ভারতের সংবিধানের বিয়াল্লিশতম সংশোধনীর মাধ্যমে বনসম্পদ সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে আরো কেন্দ্রীভূত হয়। বনসম্পদকে, সংবিধানের সপ্তম তফসিলের যুগ্ম তালিকায় স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৮০ সালে প্রণীত বনভূমি সংরক্ষণ আইন বনভুমি বন-সংরক্ষণ ব্যতিত অনান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহারের উপর কঠোর শর্ত আরোপ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বনবাসী উপজাতিদের অধিকার বা বনসংরক্ষনে তাদের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ কোনো চিন্তাধারার পরিবর্তন চোখে পড়েনি।
স্বাধীনতার পরবর্তীতে বনসংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারতসরকারের কৃষি মন্ত্রালয়কে। তবে কৃষির বিকাশ সাধনে বনসম্পদ উন্নয়ন বার বার বিঘ্নিত হয়েছে। ১৯৮৫ সালে ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রালয়ের স্থাপন হয় এবং ১৯৮৮ সালে নতুন জাতীয় বন নীতি গৃহীত হয়। সম্রাজ্যবাদের আগমনের অদ্যাবধি এই প্রথমবারের বনসম্পদ সংরক্ষণে জনজাতিদের ভূমিকার এক পুনর্মূল্যায়ন ধরা পড়ে এই নীতিতে। অরণ্যের সাথে উপজাতিদের সহাবস্থানীয় সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং তাদেরকে সম্পৃক্ত করে বনসম্পদ সংরক্ষনের হেতু গণআন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলা হয়। বনাঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী বা বননির্ভর উপজাতিগুলীর অধিকার এবং ক্ষুদ্র বনজ সম্পদের উপর তাদের নির্ভরশীলতার কথা স্থান পায় এই পরিবর্তিত নীতিতে[10]।
এই নীতি রূপায়িত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯০ সাল থেকে যৌথ বনসংরক্ষণ প্রথা চালু হয় সারা দেশে। এই প্রথা এর পূর্বে বিভিন্ন রাজ্যে চালু থাকলেও হলেও ১৯৯০ থেকে আরো একাধিক রাজ্য এই প্রথা চালু করে তাদের নিজস্ব যৌথ বনসংরক্ষণ নিয়মাবলীর মাধ্যমে। এই প্রথায় বনদফতর এবং বনসম্প্রদায়গুলি একত্রে বনসুরক্ষা কমিটি গঠন করে বনসংরক্ষনের কাজ করবে। বনসুরক্ষা কমিটিগুলী গঠিত হবে বনদফতরের তত্ত্বাবধানে। JFM তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল – সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, সুবিধা ভাগাভাগি এবং বাস্তব পরিচালনায় বনদফতর এবং বনসম্প্রদায়- দুইয়েরই অধিকার[11]। তবে বাস্তবে, এই সংক্রান্ত গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে যদিও দ্বিতীয় অংশ, অর্থাৎ সুবিধা ভাগাভাগির ক্ষেত্রে এই প্রথা খানিক সাফল্য পেয়েছে, অন্য দুই অংশে অবশ্য এই প্রথার বিশেষ ভাবে সফল নয়[12]। তার কারণ অবশ্য ব্রিটিশ শাসন কালে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বনদফতর এবং তার আধিকারিকদের হাতে বিপুল ক্ষমতায়ন, যার ফলে দেশের বনাঞ্চলে ক্ষমতার এক গভীর শ্রেণিবিন্যাস ঘটেছিল। এক দিকে ছিল প্রবল ক্ষমতাশালী বনদফতর এবং অন্যদিকে হতদরিদ্র ক্ষমতাবিহীন বনসম্প্রদায়। এরফলে পরস্পরের প্রতি যে অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তা কোনো কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস ব্যতিত লঙ্ঘন করা ছিল অসম্ভব[13]। উপরন্তু এই প্রথায় বনদফতর এর প্রভুত্ব কোথাও সংস্পৃষ্ট করা যায়নি।
ইতি মধ্যেই সংবিধানের ৭৩ তম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে ত্রিস্তরিও পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়। প্রাথমিক ভাবে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে তা চালু না করা হলেও ১৯৯৬ এর তফসিলি এলাকায় পঞ্চায়েত সম্প্রসারণ (Panchayat Extension to Scheduled Areas) আইনের মাধ্যমে সংবিধানের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শিডিউল অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলীতেও এই ব্যবস্থার প্রণয়ন করা হয়। দিলিপ সিংহ ভুরিয়ার নেতৃত্বে গঠিত যে কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়, তার ছত্রে ছত্রে ছিল আদিবাসীদের তাদের জল, জঙ্গল এবং জমির উপর স্বশাসনের ব্যবস্থার স্বীকৃতির দেওয়ার কথা[14]।
২০০২ থেকে ১৫০ বেশি আদিবাসী অধিকারের সংগঠন এক ছাতার তলায় (Campaign for Survival and Dignity) এসে দিল্লিতে একটানা আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করে। তাদের মূল দাবি ছিল, ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে হয়ে আসা বনসম্প্রদায়গুলির বন থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করা এবং বনসম্পদের উপর তাদের প্রথাগত অধিকারের আইনি স্বীকৃতি[15]। ২০০৪ সালে এন ডি এ সরকারের পতন এবং আদিবাসী সংগঠনগুলির নিরন্তর আন্দোলনের ফলে অবশেষে, ২০০৬ সালে প্রণীত হয় বন অধিকার আইন (FRA), বা Scheduled Tribes and Other Traditional Forest Dwellers (Recognition of Forest Rights) Act.
এই আইনের মূল লক্ষ বনসম্প্রদায়ের অধিকার হরণের ‘ঐতিহাসিক অবিচারের’ প্রতিকার। এই আইনটি তফসিলি উপজাতি এবং বনে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের জীবিকা নির্বাহের জন্য বনের উপর ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত একাধিক প্রথাগত অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দেয়। এই আইন এই গোষ্ঠীগুলিকে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত ভাবে আইনি দখল, বসবাস, ক্ষুদ্র বনজ সম্পদের মালিকানা, প্রবেশাধিকার, ব্যবহার এবং নিষ্পত্তি, মাছ ধরা, গবাদিপশুর চারণভূমির হিসেবে ব্যবহার, ইজারাকে মালিকানায় রূপান্তর করার অধিকার, যেকোনো সাম্প্রদায়িক বন সম্পদের সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ সম্পর্কিত, জীববৈচিত্র্যের অ্যাক্সেস, পুনর্বাসন এবং উন্নয়নের অধিকার ইত্যাদি প্রদান করে। এই আইনে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল চিহ্নিতকরণের বিধানও আছে এবং সংরক্ষিত এলাকা থেকে মানুষের কার্যকলাপ বাদ দেওয়ার জন্য একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়াও প্রদান করা আছে। উল্লিখিত বন-অধিকার-গুলী তখনই পাওয়া যাবে যখন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তার অধিকার দাবী করবে। এই দাবী যাচাই করার এক বহু-স্তরিয় প্রক্রিয়া এই আইনের দেওয়া আছে। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে এই প্রক্রিয়ায় মুখ্যভূমিকা কোনো সরকারী আধিকারিক নয়, বরং ‘গ্রাম সভা’ পালন করবে। [16]
বন অধিকার আইন এক এমন শাসন পরিকাঠামোর কথা বলে যা ব্রিটিশ আমলের বা স্বাধীন ভারতের প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পূর্বের শাসন কাঠামোকে উপর থেকে নীচে, কেন্দ্রীভূত এবং আমলাতান্ত্রিক হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। FRA-এর অধীনে শাসন ব্যবস্থাকে নীচে থেকে উপরে, বিকেন্দ্রীভূত এবং গণতান্ত্রিক।
২০১৫ সালে রিসোর্স রাইটস ইনিশিয়েটিভ কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে FRA-এর অধীনে অধিকার স্বীকৃতির জন্য বনের ন্যূনতম সম্ভাব্য এলাকা চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী এই আইন ১০ কোটি একর বনভূমিতে বনবাসীদের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে। এর মধ্যে, ২০২১ সাল পর্যন্ত, ন্যূনতম সম্ভাব্য ক্ষেত্রটির মাত্র ১৪.৭৫% স্বীকৃত হয়েছে[17]। ২০২২ সালে, রাজ্যসভায় Ministry of Tribal Affairs কর্তৃক উপস্থাপিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে বন অধিকারের দাবির মাত্র ৫০% (ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত উভয়) স্বীকৃতি পেয়েছে[18]। উত্তরাখণ্ডের মতো কিছু রাজ্যে, দাখিল করা প্রায় ৭০০০ দাবির মধ্যে মাত্র ১৮৫টি বন অধিকারের দাবি স্বীকৃতি পেয়েছে। ছত্তিশগড় এবং ওড়িশার মতো রাজ্যগুলি এই দিক থেকে ভালো করেছে, তবে আসাম, গুজরাট, বিহার, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলির দশা ভয়াবহ[19]। ২০২৫ এর জানুয়ারী মাসে ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিকাল ওয়িক্লি পত্রিকায় বিশিষ্ট পরিবেশ বিশেষজ্ঞ শরদ লেলে এবং গিতাঞ্জয় সাহুর একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধের শিরনামঃ “Democratising Forest Governance: Challenges Old and New”। এই প্রবন্ধ অনুযায়ী, সম্প্রদায়-গত অধিকার স্বীকৃতির হার শোচনীয়। ছত্তিশগড় এবং মহারাষ্ট্র শতাংশের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ রাজ্য। তবে, সম্ভাব্য এলাকার মধ্যে স্বীকৃত এলাকার হারের দিক থেকে তারা যথাক্রমে মাত্র 36% এবং 24%। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো প্রধান বনাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে কোনো CFR স্বীকৃতি পায়নি[20]।
আইন বাস্তবায়নের এই দশার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। তা সব হয়ত এখানে ব্যক্ত করা সম্ভব হবে না। তবে এর মধ্যে মূল সংরক্ষণবাদী এবং বনকর্মী/ আধিকারিকদের এই আইনের বিরোধিতা এবং বনদফতরের নিজের প্রভুত ক্ষমতা পরিবর্জন বিমুখতা[21]। দ্বিতীয়ত, ভারত সরকারের ‘ease of doing business’ এর নামে এই আইনের বিভিন্ন শর্তগুলিকে উত্তরোত্তর লাঘু করার প্রচেষ্টা। এক্ষেত্রে ২০২২ এর সংশোধিত বন সংরক্ষণ নিয়মাবলী বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য[22]। গত ১৫ বছরে ৩ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি বনভূমি “উন্নয়নমূলক” উদ্দেশ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৬০,০০০ হেক্টর খনিজ পদার্থ খননের জন্য[23]। এই সমস্ত প্রকল্পের ছাড় পাওয়ার জন্য আগে গ্রাম সভার ছাড়পত্র ছিল অত্যাবশ্যক। সংশোধিত বন সংরক্ষণ নিয়মাবলী এই আবশ্যিক শর্তকে লঘু করে দিয়েছে। ফলে হাজারো উপজাতিকে বৈধ অধিকার সত্ত্বেও অরণ্য থেকে উৎখাত হতে হচ্ছে। উপরন্তু এইসব ক্ষেত্রে ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য যে ‘Compensatory Afforestation Fund’ তৈরি করা হয়েছে, তা বনায়ন ব্যতিত অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করার ছাড় ও দিয়ে দেওয়া হয়েছে[24]।
অন্যদিকে, ভারতে প্রাকৃতিক অরণ্যের ধ্বংস কৃত্রিম বৃক্ষরোপণের দ্বারা পরিপূরণের চেষ্টা চলছে[25]। বলা বাহুল্য যে কৃত্রিম বৃক্ষরোপণ কখনই প্রাকৃতিক অরণ্যের বিকল্প হতে পারে না। এর একটা অর্থনৈতিক দিক ও আছে। আন্তর্জাতিক রেডড প্লাস (REDD+) পদ্ধিতি দেশগুলীর মোট বনভূমির বৃদ্ধিকে কে উৎসাহিত করে এবং এই বৃদ্ধির ভিত্তিতে রাষ্ট্রগুলি আর্থিক ভাবে লাভবান হয়। উপরন্তু প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অন্তর্গত ভারতের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDC) অনুযায়ী ভারত বনখাতে আরো ২.৫ গিগা CO2 সমতুল্য CO2 সঞ্চয় করায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অজুহাতে বনসংরক্ষনে রাষ্ট্রের ভূমিকা বৃদ্ধি এবং বন সংরক্ষণ আইনকে শিথিল করার এক প্রচেষ্টা দেখা দিচ্ছে যা বন-অধিকার আইনের মূল ভাবনার পরিপন্থী[26]।
একশতকের ও বেশি সময়ের সংগ্রামের ফল যে আইনের প্রণয়ন, সেই আইন ঘোরতর বিপর্যয়ের মুখে। আমরা ধীরে ধীরে ফিরে যাচ্ছি সেই সাম্রজ্যবাদী বনশাসন ব্যবস্থায়। এই গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণে পুনরায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার।
Ujal Kumar Mookherjee is an Assistant Professor at the West Bengal National University of Juridical Science where he teaches Human Rights Law. He researches on Forest Laws and Adivasi Rights.
Sanyukta Bhattacharya is a teacher. She holds a B.Ed qualification and an M.A. in Philosophy and has been passionately teaching primary, secondary and graduation level students for the past 20 plus years.
[1] Mann, M. (2001). Timber Trade on the Malabar Coast, c. 1780-1840, Environment and History, 7(4), 404
[2] Ibid.
[3] Weil, B. (2006). Conservation, Exploitation, and Cultural Change in the Indian Forest Service, 1875-1927. Environmental History, 11(2), 319–343
[4] History, Indian Forest Service, https://ifs.nic.in/hist.aspx#:~:text=History%3A,General%20of%20Forests%20in%201866.
[5] Indian Forest Act, 1927
[6] Indian Forest Act, 1927
[7] Government of India, The National Forest Policy of India (1952)
[8] Sharma, J.V. & Kohli, P. (2010). Forest Governance and Implementation of REDD+ in India: A Policy Brief (Norwegian Ministry of Foreign Affairs & The Energy and Resources Institute). https://landportal.org/node/61433 (last visited Jul 5, 2021)
[9] Government of India, Report of the National Commission on Agriculture (1976).
[10] Ministry of Environment & Forests, National Forest Policy Resolution (1988), Para 2.1 https://mpforest.gov.in/img/files/Policy_NFP.pdf (last visited Feb 17, 2025).
[11] Arora, D. (1994). From State Regulation to People’s Participation: Case of Forest Management in India, 29 Economic and Political Weekly, 691,
[12] Ibid
[13] Schug, D.M (2000). The Bureaucratisation of Forest Management in India, 6(2) Environment and History, 229–42.
[14] Report of the Scheduled Areas and Scheduled Tribes Commission, Government of India (2004). https://tribal.nic.in/downloads/Statistics/OtherReport/BhuriaReportFinal.pdf (last accessed Feb 10, 2025)
[15] Barnes, C., Van Laerhoven, F., & Driessen, P. P. J. (2016). Advocating for change? How a civil society-led coalition influences the implementation of the forest rights act in india. World Development, 84, 162–175. https://doi.org/10.1016/j.worlddev.2016.03.013
[16] Scheduled Tribes and Other Traditional Forest Dwellers (Recognition of Forest Rights) Act.
[17] M L, Samal AK and Sahu G, ‘15 Years of FRA: What Trends in Forest Rights Claims and Recognition Tell Us – The Wire Science’ (22 December 2021). <https://science.thewire.in/politics/rights/15-years-forest-rights-act-claims-recognitiontrends/> accessed 1 February 2024
[18] Ministry of Tribal Affairs, Government of India, Rajya Sabha Unstarred Question No 1258 (2023) https://sansad.in/getFile/annex/262/AU1258.pdf?source=pqars (last accessed Feb 16, 2025)
[19] https://sansad.in/getFile/annex/262/AU1258.pdf?source=pqars
[20] Lele,S., Sahu, G. (2025). Democratising Forest Governance Challenges Old and New, 60(2) Economic and Political Weekly, 41.
[21] Ibid
[22] Jha, S. (2023, Jan 4). MoEFCC Refuses to Put New Forest Conservation Rules on Hold, Says Do Not Dilute Forest Rights Act. Down to Earth. https://www.downtoearth.org.in/news/governance/moefcc-refuses-to-put-new-forest-conservation-rules-on-hold-says-do-not-dilute-forest-rights-act-86932
[23] Press Trust of India (2023, Aug 7). Over 3 lakh hectares of forest lands diverted under Forest Conservation Act in last 15 years. Times of India. https://timesofi ndia.indiatimes.com/ india/over-3-lakh-hectares-of-forest-land-diverted-under-forest-conservation-act-in15-years-govt/articleshow/102507083.cms.
[24] Menon, M. and Kohli, K. (2022, Dec 4). Compensatory Afforestation: Saving Trees or Greenwashing?. The Times of India. https://timesofindia.indiatimes.com/blogs/voices/compensatory-afforestation-saving-trees-or-greenwashing/
[25] Jha, S. (2022, Jan 27). Plantations, invasive species… what all India counts as ‘forest’. Down to Earth. https://www.downtoearth.org.in/news/forests/plantations-invasive-species-what-all-india-counts-as-forest–81282n
[26] Phelps, J., Webb, E. L., & Agrawal, A. (2010). Does redd+ threaten to recentralize forest governance? Science, 328(5976), 312–313. https://doi.org/10.1126/science.1187774
[ad_2]
Source link

