ইংরেজীর আধিপত্যে মাতৃভাষার প্রান্তিকতা – বর্তমান আইন ব্যবস্থার এক অন্তরায় – The Journal of Indian Law and Society

0
13


By Titli Mukherjee

(This blog is the Eighth in the series of blogs that JILS will publish in various vernacular languages as part of its initiative to mark the International Mother Language Day.)

মাতৃভাষা হল প্রত্যেক মানুষেরই গৌরব, স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য এর এক বিষয়, যেমন বাঙালি লেখক অতুলপ্রসাদ সেনের কথায় “মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা!” কিন্তু বর্তমানে মানুষ পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে তাদের গৌরবান্বিত সেই মাতৃভাষার ব্যবহার একেবারেই বিনষ্ট করেছে, আর তার সর্বোপরি উদাহরণ আজকের আইন ব্যবস্থা। বর্তমান আইন ব্যবস্থায় আজ ইংরেজির সার্বিক ব্যবহার সাধারণ মানুষের আইনি নিরক্ষরতা বাড়াতে এবং আইন বিষয়কে এক বিশেষ বৃত্তিয় মানুষের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ হতে সাহায্য করেছে, তাই আইন ব্যবস্থায় সমাজের সকল মানুষের অংশগ্রহণের নিমিত্তে আইনে মাতৃভাষার ব্যবহার আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়।

ভূমিকা

যদি আপনি কোনো মানুষের সাথে তার বোঝা যায় এমন ভাষায় কথা বলেন, তাহলে তা তার মস্তিষ্কে পৌঁছায়[1] [2] । কিন্তু যদি তার মাতৃভাষায় কথা বলেন, তাহলে তা তার হৃদয়ে পৌঁছায়”[1] – নেলসন ম্যানডেলা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “শিক্ষায় মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ”[2]। এই ভাষা হল মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ, যার সার্বিক প্রয়োগে সকলে তাদের অনুভূতির গঠন ও বহি প্রকাশ ঘটায়। আইনের ক্ষেত্রেও ভাষা হল এক মৌলিক বিষয়, কারণ এটি আইনের ব্যাখ্যা এবং বিচার প্রদানে সমালোচনামূলকভাবে অংশ নেয়। কিন্তু উপনিবেশীয় রীতিনীতির অন্ধ অনুকরণে আজ বর্তমান আইন ব্যবস্থায় ইংরেজীর আধিপত্য আঞ্চলিক ভাষা তথা মাতৃভাষার ব্যবহারকে কোণঠাসা করেছে। ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এর ভাষায়, “আমি কেবল আশা করি যে, আমরা প্রত্যেকে আঞ্চলিক ভাষায় আইনী শিক্ষা পাব যাতে আমরা আইনজীবীদের নতুন দল তৈরি করতে পারি যারা তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় সুসজ্জিত হবে আদালতের সামনে তর্ক করতে এবং ন্যায়বিচারের কারণকে প্রচার করার জন্য।”[3]

ভাষা হল যোগাযোগ এবং প্রকাশের একটি মাধ্যম, যা তথ্য সংগ্রহ এবং অর্থপূর্ণ কথোপকথনে জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিকন্তু, ভাষা শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু এবং শিক্ষাকে সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে ভাষা নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯(১)(ক) প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব ভাষায় মত প্রকাশের অধিকার এবং অনুচ্ছেদ ২১এ যেকোনো ভাষায় শিক্ষা লাভের এই অধিকারকেই ব্যক্ত করে।[3] [4]  কিন্তু আঞ্চলিক ভাষায় মত প্রকাশের এবং আইনী শিক্ষালাভের এই অধিকারের বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগ আজ প্রায় দুর্লভ। এর ফলস্বরূপ  বর্তমান আইন ব্যবস্থা এক বিশেষ বৃত্তের সীমিত কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে এবং যা সাধারণ মানুষের পরিধির সম্পূর্ণ বাইরে।  

আইনাঙ্গনে ইংরেজি ভাষার নিরঙ্কুশ দখল- এক উপনিবেশিক প্রভাব

ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের সময় যে আইনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল, তার ভাষা ছিল প্রধানত ইংরেজি। কিন্তু স্বাধীনতার পরও ভারতে সেই ধারা বহাল রয়েছে, যার অন্যতম কারণ ভারতীয় সংবিধানের ৩৪৮ অনুচ্ছেদ। এই অনুচ্ছেদ দেশের সর্বোচ্চ ও উচ্চ আদালতগুলোর সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে বাধ্যতামূলক করে তুলেছে। ফলস্বরূপ, সাধারণ জনগণের জন্য বিচারপ্রক্রিয়া বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং তা তাদের অধিকারকে সীমিত করে তুলেছে।  

ভারতের সংবিধানের ৩৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী—

১. সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের কার্যক্রম ইংরেজি ভাষায় পরিচালিত হবে, যদি না সংসদ কোনো আইন প্রণয়ন করে অন্য ভাষার অনুমোদন দেয়।

২. আইনের প্রামাণ্য পাঠ ইংরেজিতে হবে, যদিও সংসদ বা রাজ্য বিধানসভা হিন্দি বা অন্য ভাষায় অনুবাদ প্রকাশ করতে পারে।

এই অনুচ্ছেদ একদিকে যেমন ব্রিটিশ আইনি কাঠামোর উত্তরাধিকার বহন করে, তেমনই এটি সাধারণ জনগণ ও বিচার ব্যবস্থার মধ্যে একটি বিশাল ভাষাগত দূরত্ব সৃষ্টি করে।  

এছাড়াও আইনজীবী ও বিচারকদের ইংরেজিতে প্রশিক্ষিত করা, আইন বিষয়ক বেশিরভাগ বই ও নথি ইংরেজিতে রচিত হওয়া, সর্বোপরি খ্যাতনামা আইন-মহাবিদ্যালয়গুলিতে আইন শিক্ষায় ইংরেজির সর্বাধিকরন বর্তমান বিচারপ্রক্রিয়াকে অধিকতর সীমাবদ্ধ ও গণবিমুখ করে তুলেছে।  

ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং আইনি ভাষার প্রতিবন্ধকতা

ভারতের মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট, অনিতা কুশওয়াহা বনাম পুষ্প সুদান[4], মামলায়  রায় দিয়েছে যে, ন্যায়বিচারের অধিকার ভারতীয় সংবিধানের ১৪ এবং ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে প্রতিশ্রুত অধিকারের একটি উপাদান। কিন্তু আইনি ভাষায় ইংরেজির আধিপত্য সরাসরি একজন ব্যক্তির ন্যায়বিচার চাওয়া এবং পাওয়ার ক্ষমতাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতে, “ নাগরিকরা যে ভাষায় কথা বলে এবং বোঝে, সেই ভাষায় ন্যায়বিচারের অ্যাক্সেস পেতে এবং বুঝতে সক্ষম না হলে তা অর্থপূর্ণ হতে পারে না ”[5]। এর প্রতিকূল প্রভাবগুলি হল-  

আইনী অধিকার সম্পর্কে নিরক্ষরতা-  

ভারতীয় নীতি অনুসারে “আইনী অজ্ঞতা মার্জনীয় না” (ignorentia juris non excusat)। কিন্তু রোমান ও ইংরেজি আদলে মোড়া ভারতের আইনী ভাষা বৃহত্তর জনসাধারণের বোধগম্যতার একেবারে বাইরে। ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন,  “ইংরেজি ভাষা তার ‘আইনি অবতারে’ ৯৯.৯% নাগরিকের বোধগম্য নয়”[6]। তাই অনেকেই তাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবচেতন, এবং পারস্পরিকভাবে আইনী দায়িত্ব লঙ্ঘনের জন্য অপরাধী। আইনি সচেতনতার অভাবের কারণ গুলি হল- আইন সম্পর্কে পড়াশোনার সুযোগ কম, আইনের জটিলতা সাধারণ মানুষের বুঝতে সমস্যা তৈরি করে, অনেক সময় ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রচারিত হয়, আবার অনেকেই মনে করেন আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া ব্যয়বহুল।[5] [6]  ভারতীয় সংবিধান নাগরিকদের এই সংক্রান্ত সুরক্ষা দিলেও, তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হলে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাই সরকার, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম একসঙ্গে কাজ করলে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর প্রভাব-  

ভারতের আইনী ভাষায় ইংরেজির প্রাধান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি বড় বাধা সৃষ্টি করেছে। বহু দরিদ্র ও গ্রামীণ মানুষ, বিশেষ করে ভাষাগত সংখ্যালঘুরা, আইনি নথি ও আদালতের কার্যক্রম বুঝতে পারে না, ফলে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯ ও সমভাবে সেই ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা প্রদানের কথা বলে। কিন্তু আদালত ও সরকারি কার্যক্রমে ইংরেজির আধিপত্য তাদের জন্য বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও, অনুচ্ছেদ ৩০ সংখ্যালঘুদের নিজস্ব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অধিকার দিলেও আইনি শিক্ষায় তাদের প্রবেশাধিকার বর্তমানে এই ভাষাগত প্রভেদের কারণে খুবই সীমিত।

আদালতের কার্যক্রম সংক্রান্ত সমস্যা-  

ভারতে বহু মানুষ আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন না এবং আদালতে স্ব-প্রতিনিধিত্ব করতে বাধ্য হন। কিন্তু আদালতের জটিল আইনি ভাষা সাধারণ মানুষের বোঝার বাইরে থাকায় তারা ন্যায়বিচারে পিছিয়ে পড়েন। বিশেষত উচ্চ আদালতে ব্যবহৃত ভাষা আরও জটিল এবং ফলে অনেকসময়ই স্ব-প্রতিনিধিত্ব মামলাকারীরা অবিচারের শিকার হন। ফলস্বরূপ, ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি অসম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা সংবিধানের “আইনের সামনে সমতা” (১৪ অনুচ্ছেদ) নীতির পরিপন্থী।  

আঞ্চলিক ভাষায় আইন ও রায় অনুবাদের ব্যর্থতা-  

ভারতের মতো বহু-ভাষিক দেশে আইনি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আইন এবং আদালতের রায় ইংরেজির পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষায় হওয়া উচিত, যাতে তা সকল নাগরিকের বোধগম্য হয়। কিন্তু বেশিরভাগ আইনের পরিভাষা এবং উচ্চ আদালতের রায় ইংরেজিতে হওয়ায় তা সাধারণ জনগণের মধ্যে আইনী অজ্ঞতা (legal ignorance) তৈরি করে এবং তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই উদ্দেশ্যেই ১৯৬০ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুসারে, অষ্টম তফসিলে তালিকাভুক্ত আঞ্চলিক ভাষাগুলিতে কেন্দ্রীয় আইন অনুবাদ করার জন্য  সরকারী ভাষা (আইনগত) কমিশন[7] গঠন করা হয়েছিল, যেটি প্রত্যেকটি রাজ্যের আইন বিভাগের সহায়তায় অনুবাদের কাজকে বাস্তবায়িত করবে। কিন্তু আসাম, কর্ণাটক, কেরালা এবং তামিলনাড়ু ছাড়া দেশের বাকি সকল রাজ্য এই উদ্যোগ থেকে বিরত থেকেছে। এছাড়াও, ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ রায় অনুবাদের ক্ষেত্রে বর্তমানে AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেওয়া হলেও তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ফলে, সমগ্র আইনী ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের পরিধির একেবারে বাইরে চলে গেছে।  

আইন ব্যবস্থায় আঞ্চলিক ভাষার অন্তর্ভুক্তিকরণ

আইনি ভাষার সরলীকরণ ও আইন ব্যবস্থায় আঞ্চলিক ভাষার অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বর্তমানে ভারতে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্যোগ হলো:

আইনি শিক্ষার সংস্কার ও সাধারণ ভাষা আন্দোলন-

আইনী শিক্ষায় সম্পূর্ণ ইংরেজী পরিভাষার ব্যবহার প্রায়শই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আইন বিষয়টিকে আরো জটিল করে তোলে এবং তাদের ভবিষ্যত কর্মজীবনে মক্কেলদের সাথে আইনী পরামর্শ আদান প্রদানের ক্ষেত্রে এক ধারাবাহিক বিচ্ছেদ তৈরি করে। তাই সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আসা ছাত্র ছাত্রীদের বিশেষভাবে আইনী পরিভাষাকে রপ্ত করানোর উদ্দেশ্যে তাদের মাতৃভাষায় আইনী শিক্ষা দেয়ার প্রচেষ্টা বর্তমানে এক নতুন উদ্যোগ। যেমন, ২০০২ সালে টি.এম.. পাই ফাউন্ডেশন বনাম কর্ণাটক রাজ্য[8]  মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠিত করে যে ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার অধিকার রয়েছে। অধিকন্তু, বর্তমানে হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুনের ইন্ডিয়ান ল সোসাইটি “প্লেইন ল্যাংগুয়েজ ড্রাফটিং”-এর ওপর কোর্স চালু করেছে[9]

এছাড়াও, এক নতুন উদ্যোগ হল সাধারণ ভাষা আন্দোলন। আইনি নথি সহজ এবং স্পষ্ট ভাষায় লেখার জন্য ২০১৮ সালে, এমপি রাজীব শংকর রাও “ড্রাফটিং অব ল ইন প্লেইন ল্যাংগুয়েজ বিল”[10] প্রস্তাব করেন, যা এখনও প্রক্রিয়াধীন। উপরন্তু, কিছু রাজ্য যেমন মহারাষ্ট্র, সহজ ভাষায় আইনি ফর্ম তৈরি করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।  

আইনি সহায়তা কেন্দ্র এবং সচেতনতা কর্মসূচি-

বর্তমানে সাধারণ মানুষের আইনি সচেতনতা বাড়াতে এবং সহজ ভাষায় আইনি তথ্য প্রদানে সরকার,  বিদ্যালয় এবং এনজিওগুলো বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতে সরকার কর্তৃক আইনগত সহায়তা প্রদান করার উদ্দেশ্যে আইনগত সহায়তা কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৮৭ (Legal Services Authorities Act, 1987) বানানো হয়। এই আইনের অধীনে জাতীয় ও রাজ্য আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (NALSA ও SALSA) দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করে, ফলে সাধারণ মানুষের আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ন্যায়বিচারে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হয়।  

ই- কোর্ট প্রকল্প-  

ভারত সরকারের ই-কোর্ট প্রকল্পের মাধ্যমে আদালতের রায় এবং আদেশ ডিজিটালভাবে সহজ ভাষায় উপলব্ধ করার উদ্যোগ বৈধতার ভিত্তিতে পুরোপুরিভাবে গ্রহণযোগ্য না হলেও প্রান্তিক এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সে বিষয়ে এক প্রাথমিক ধারণা অর্জনের জন্য এই প্রচেষ্টা যথাযথ।  

বিচার বিভাগের উদ্যোগ-  

সময়ের সাথে সাথে সুপ্রিম কোর্ট এবং উচ্চ আদালতগুলি সহজ ভাষায় রায় লেখা ও তার অনুবাদের প্রচেষ্টা শুরু করেছে।  

যেমন, রাজবালা বনাম হরিয়ানা রাজ্য[11]  মামলায় আদালত পরামর্শ দেয় যে রায় সহজ এবং বোধগম্য ভাষায় লেখা উচিত।  

এছাড়া, অনুরাধা ভাসিন বনাম ভারত সরকার[12] মামলায় আদালত নির্দেশ দেয় যে জনগণের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত আদেশ স্পষ্ট এবং সহজ ভাষায় প্রকাশিত হওয়া উচিত।  

আইনী ভাষা সরলীকরণের এই সকল উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার সার্বিক প্রয়োগ এখনও প্রশ্নের সম্মুখীন। তাই এই বিষয়ে শীঘ্র ও যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।  

উপসংহার

আইনগত ভাষার সরলীকরণ কেবল একটি আইনি সংস্কারের বিষয় নয়, এটি মৌলিক মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত, যা ন্যায়বিচারে সমতা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। ভারতে বিচারিক প্রক্রিয়া অধিকাংশ মানুষের জন্য জটিল এবং দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য, যারা প্রায়ই উচ্চতর আইনি পরিভাষা বোঝার সক্ষমতা রাখেন না। ফলে, ন্যায়বিচার তাদের নাগালের বাইরে থেকে যায়, যা সাংবিধানিক অধিকার এবং “আইনের সামনে সমতা” নীতির পরিপন্থী।  

একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমতাভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আইনি ভাষার সরলীকরণ অপরিহার্য। এটি শুধুমাত্র সাধারণ জনগণের আইনি প্রক্রিয়ায় প্রবেশাধিকারের সুযোগ বাড়াবে না, বরং বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। আদালতের রায়, আইনি নথিপত্র এবং আইনের ধারাগুলো সহজ ও বোধগম্য ভাষায় প্রকাশ করা হলে, সাধারণ মানুষ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন এবং স্ব-প্রতিনিধিত্বকারী মামলাকারীদের জন্যও ন্যায়বিচার পাওয়া সহজতর হবে।  

এই রূপান্তর সাধনে বিচার বিভাগ, আইনজীবী, নীতি নির্ধারক এবং নাগরিক সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যেমন মোহাম্মদ আজমল আমির কাসাব বনাম মহারাষ্ট্র রাজ্য[13] মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত ঘোষণা করেছে যে প্রত্যেক মানুষের আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ এবং ৩৯এ -এর অধীনে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা (free legal aid) পাওয়ার অধিকার আছে যা হয়তো সকলের জ্ঞানত না। ফলে এটি বিচারক দের কর্তব্য যে তারা অভিযুক্তদের এই অধিকার সম্পর্কে অবগত করবেন। আইনি ভাষায় মাতৃভাষার অন্তর্ভুক্তিকরণ শুধু নাগরিকদের ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা বাড়াবে না, বরং আইন ব্যবস্থার প্রকৃত লক্ষ্য—ন্যায় ও সাম্যের প্রতিষ্ঠা—সফলভাবে বাস্তবায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই বলাবাহুল্য, আইনি ভাষার সরলীকরণ-এর  মাধ্যমেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে “বিচার ব্যাবস্থা”, এবং পরিপূর্ণতা পাবে সেই পরিভাষা-

“ন্যায়সঙ্গত রায় যেকোনো মূল্যে প্রদান করা উচিত, বাস্তবিক পরিণতি যাই হোক না কেন” (Fiat justitia ruat caelum, or, Let Justice Be Done Though the Heaven Falls)।

Titli Mukherjee is a dedicated law student at the Government Centre of Legal Education (Previously known as Hooghly Mohsin College), currently in her fourth semester. With a profound interest in Constitutional Law, Jurisprudence, and evolving legal paradigms, she strives to explore and contribute to contemporary legal discourse.


[1]  https://www.brainyquote.com/quotes/nelson_mandela_121685

[2] Tagore, Rabindranath. “শিক্ষার স্বাঙ্গীকরণ”, https://tagoreweb.in/Essays/shikkha-73/shikkhar-angikoron-6278

[3] https://indianexpress.com/article/india/cji-chandrachud-legal-education-regional-languages-9543015/

[4] Anita Kushwaha v. Pushap Sudan, (Transfer Petition (C) No. 1343 of 2008).

[5] https://theanalysis.org.in/removing-language-as-a-barrier-to-justice/

[6] https://theanalysis.org.in/removing-language-as-a-barrier-to-justice/

[7] https://vidhilegalpolicy.in/blog/lack-of-access-to-translated-central-laws-in-regional-languages-on-the-internet-disempowers-citizens/

[8] T.M.A.Pai Foundation & ors. v. State of Karnataka & ors. AIR 2003 SC 355.

[9] Tiwari, Dr. Namrata. “Access to Justice in India: The Crucial Role of Legal Language Simplification”, https://www. ijlra.com/

[10] https://vidhilegalpolicy.in/blog/beyond-simplistic-plain-drafting/

[11] Rajbala & ors. v. State of Haryana & ors, AIR 2016 SC 33.

[12] Anuradha Bhasin v. Union of India, AIR 2020 SC 1308.

[13] Mohammed Ajmal Mohammad Amir Kasab @ Abu Mujahid v. State of Maharashtra, (2012) 8 SCR 295.




Source link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here